ঢাকা থেকে একদিনের ট্যুরে ঘোরার সেরা জায়গা: কম খরচে ঘোরার গাইড
ঢাকা থেকে একদিনের ট্যুরে ঘোরার সেরা জায়গা: কম খরচে ঘোরার গাইড
ঢাকার ব্যস্ত জীবন থেকে একদিনের জন্য একটু স্বস্তির খোঁজ করছেন? রাজধানীর আশেপাশে এমন অনেক সুন্দর জায়গা আছে যেখানে স্বল্প খরচে একদিনের ট্যুর উপভোগ করা যায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থান ও মনোরম পরিবেশে ঘুরে আসার জন্য আপনি বেছে নিতে পারেন নিকটবর্তী কিছু জনপ্রিয় গন্তব্য। চলুন দেখে নেওয়া যাক, ঢাকা থেকে একদিনের ভ্রমণে কোথায় কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে একদিনের ট্যুরের সেরা স্থান
১. সোনারগাঁ – ইতিহাস ও সংস্কৃতির শহর
সোনারগাঁ বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক শহর, যা নারায়ণগঞ্জ জেলায় অবস্থিত।সোনারগাঁ এক সময় বাংলার রাজধানী ছিল এবং এটি এখনো ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ। এটি প্রাচীন বাংলার রাজধানী হিসেবে খ্যাত এবং সুলতানি ও মুঘল আমলের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য বহন করে।
সোনারগাঁয়ের ইতিহাস
সোনারগাঁ ১৩শ শতাব্দীতে বাংলা অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কেন্দ্র ছিল। এটি একসময় স্বাধীন সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ এবং পরে বারো ভূঁইয়াদের শাসনাধীন ছিল। ইসা খাঁ এই শহরকে তাঁর রাজধানী হিসেবে ব্যবহার করতেন।
সংস্কৃতি ও দর্শনীয় স্থান
১. পানাম নগর – প্রাচীন বাণিজ্যিক কেন্দ্র, যা এখন ঐতিহাসিক স্থাপত্যের নিদর্শন।
2. ফোকলোর জাদুঘর – বাংলার লোকসংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের কেন্দ্র।
3. গোয়ালদি মসজিদ – ১৫শ শতাব্দীর সুলতানি আমলের স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন।
4. মেঘনা নদী – শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত নদী।
সোনারগাঁ শুধু ইতিহাসের শহর নয়, এটি বাংলার লোকশিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সংরক্ষণাগারও বটে। এটি ভ্রমণপিপাসুদের জন্য একটি আদর্শ স্থান
যাতায়াত ও খরচ:
• ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে যাওয়া যায় (ভাড়া ৭০-১০০ টাকা)।
• প্রবেশ ফি ৫০-১০০ টাকা।
• মোট খরচ ৫০০-১০০০ টাকার মধ্যে।
২. গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক – বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য
গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য, যেখানে প্রাণীরা মুক্ত পরিবেশে বিচরণ করতে পারে। এটি ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় ভ্রমণস্থান।
পার্কের আকর্ষণীয় দিকসমূহ
সাফারি জোন – দর্শনার্থীরা বিশেষ বাসে চড়ে সিংহ, বাঘ, হাতি, হরিণসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীকে কাছ থেকে দেখতে পারেন।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র – বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীদের সুরক্ষা ও গবেষণার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা।
এভিয়ারি (পাখির অভয়ারণ্য) – নানা প্রজাতির বিরল ও রঙিন পাখির বসবাসস্থল।
কৃত্রিম লেক ও নৌভ্রমণ – প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নৌকা ভ্রমণের সুযোগ।
প্রজাপতি পার্ক – নানা রঙের প্রজাপতিদের মনোমুগ্ধকর প্রদর্শনী।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা প্রদান করে, যেখানে বন্যপ্রাণীকে স্বাভাবিক পরিবেশে উপভোগ করা যায়!
যাতায়াত ও খরচ:
• ঢাকা থেকে বাসে যেতে সময় লাগে ২-৩ ঘণ্টা (ভাড়া ১০০-২০০ টাকা)।
• প্রবেশ ফি ২০০-৩০০ টাকা।
• মোট খরচ ৭০০-১৫০০ টাকার মধ্যে।
৩. মধুপুর বন – প্রকৃতির ছায়ায় একদিন
প্রকৃতির সান্নিধ্যে একদিন কাটানোর ইচ্ছা হলে মধুপুর বন হতে পারে একটি আদর্শ গন্তব্য। বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায় অবস্থিত এই বন তার বিশাল শালগাছ, সবুজ অরণ্য, বন্যপ্রাণী ও মনোমুগ্ধকর পরিবেশের জন্য বিখ্যাত। শহরের কোলাহল থেকে দূরে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে চাইলে এটি এক অনন্য জায়গা।
সকালের যাত্রা ও বনভ্রমণ
সকালবেলা বাস বা ব্যক্তিগত গাড়িতে মধুপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। বনাঞ্চলে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে সারি সারি উঁচু শালগাছ, যা যেন এক প্রাকৃতিক ছাতা তৈরি করে রেখেছে। এ বনে প্রবেশ করলেই প্রশান্তি ছড়িয়ে পড়ে মন ও প্রাণে।
বনের ভেতর হাঁটতে হাঁটতে দেখা মেলে নানা ধরনের পশুপাখির। ময়ূর, হনুমান, বনমোরগ, এমনকি মাঝে মাঝে হরিণও চোখে পড়ে। স্থানীয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কথা বলে তাদের জীবনধারা সম্পর্কে জানা যায়। তাদের তৈরি হাতে বানানো কারুকাজও কেনা যায় স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে।
মধুপুর জাতীয় উদ্যান ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র
মধুপুর জাতীয় উদ্যান এই অঞ্চলের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। এখানে সংরক্ষিত কিছু বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদের দেখা মেলে। এটি শিক্ষার্থীদের জন্যও একটি দারুণ শিক্ষামূলক স্থান, কারণ এখানে প্রকৃতি সম্পর্কে অনেক কিছু শেখার সুযোগ রয়েছে।
বনের মাঝে পিকনিক ও অবসর সময়
একদিনের ভ্রমণ পিকনিক ছাড়া যেন অসম্পূর্ণ! মধুপুর বনে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় পিকনিকের ব্যবস্থা আছে, যেখানে বসে দলবেঁধে খাওয়া ও আনন্দ করা যায়। শীতের দিনে বা বসন্তের সময় এখানে পিকনিকের জন্য প্রচুর মানুষ আসে।
বিকেলের বিদায় ও ফেরা
দিনের শেষে বনের সৌন্দর্য উপভোগ করে ফিরে আসার পালা। যাওয়ার সময় মন যেন পড়ে থাকে সেই সবুজ শালবনে, যেখানে প্রকৃতি তার সবটুকু সৌন্দর্য উজাড় করে দিয়েছে।
মধুপুর বন শুধু ভ্রমণের জায়গা নয়, এটি প্রকৃতির এক অফুরন্ত আশীর্বাদ। প্রকৃতির ছায়ায় একদিন কাটাতে চাইলে মধুপুর বনের চেয়ে ভালো জায়গা আর কী হতে পারে?
• সবুজে ঘেরা ঘন বন, যেখানে হাঁটাহাঁটি ও ট্রেকিং করা যায়।
• গারো আদিবাসীদের গ্রাম পরিদর্শন ও তাদের জীবনধারা সম্পর্কে জানা যায়।
• নিরিবিলি পরিবেশে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
যাতায়াত ও খরচ:
• ঢাকা থেকে বাসে গেলে সময় লাগে ৩-৪ ঘণ্টা (ভাড়া ২০০-৩০০ টাকা)।
• খাবার ও অন্যান্য খরচসহ মোট খরচ ৬০০-১২০০ টাকার মধ্যে।
৪. ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান – সবুজের মাঝে প্রশান্তি
ব্যস্ত নগরজীবনের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে প্রকৃতির সান্নিধ্যে একদিন কাটানো হলে মনের প্রশান্তি পাওয়া যায়। ঢাকার খুব কাছেই গাজীপুর জেলার রাজেন্দ্রপুরে অবস্থিত ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক স্বর্গরাজ্য। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ সংরক্ষিত বনাঞ্চল, যেখানে শালগাছের বিস্তৃত বন, নানা প্রজাতির গাছপালা ও বন্যপ্রাণীর সমাহার দেখা যায়।
উদ্যানের পরিচিতি
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান ১৯৭৩ সালে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ১৯৮২ সালে এটি জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা পায়। প্রায় ৫,০২২ হেক্টর আয়তনের এই উদ্যানের অধিকাংশ জুড়েই রয়েছে শালবন, যা প্রকৃতির নির্মল সৌন্দর্য উপভোগের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে।
উদ্যানের আকর্ষণ
১. শালবনের শীতল ছায়া
উদ্যানের প্রধান আকর্ষণ এর বিশাল শালবন। এই শালবন বছরের পর বছর ধরে টিকে আছে এবং গরমের দিনে শীতল পরিবেশ তৈরি করে। গাছের সারির মধ্য দিয়ে হাঁটার অভিজ্ঞতা সত্যিই মনোমুগ্ধকর।
২. নানান প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও পাখি
এখানে নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী যেমন বানর, শিয়াল, বনমোরগ, গুইসাপ, কাঠবিড়ালি, সাপসহ বিভিন্ন প্রাণীর দেখা মেলে। এছাড়া, শীতকালে পরিযায়ী পাখিরা এখানে আসে, যা পাখিপ্রেমীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয়।
৩. পিকনিক স্পট ও রিসোর্ট
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে বেশ কয়েকটি পিকনিক স্পট ও রিসোর্ট রয়েছে। এখানে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো দারুণ এক অভিজ্ঞতা হতে পারে। পিকনিকের জন্য পূর্ব অনুমতি নিয়ে আসতে হয় এবং নির্দিষ্ট স্থানে আয়োজন করা যায়।
৪. লেক ও বোটিং সুবিধা
উদ্যানের ভেতরে ছোট লেক রয়েছে, যেখানে বোটিং করার সুযোগ পাওয়া যায়। পানির ধারে বসে বা নৌকায় চড়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা।
৫. ট্রেকিং ও সাইক্লিং
যারা অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী, তারা ট্রেকিং করতে পারেন বনের সরু পথ ধরে। এছাড়া, সাইক্লিং করার জন্যও কিছু নির্দিষ্ট পথ রয়েছে, যা ভ্রমণকে আরও রোমাঞ্চকর করে তোলে।
ভ্রমণের সেরা সময়
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে ভ্রমণের জন্য শীতকাল (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি) সবচেয়ে উপযুক্ত সময়, কারণ তখন আবহাওয়া ঠান্ডা ও মনোরম থাকে। তবে, বর্ষাকালেও সবুজের প্রকৃত সৌন্দর্য দেখা যায়, যদিও কাদার কারণে চলাচল কিছুটা কঠিন হতে পারে।
পরিবেশ সংরক্ষণ ও দায়িত্ব
এই উদ্যান শুধু বিনোদনের জন্য নয়, এটি পরিবেশ সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই এখানে বেড়াতে গেলে আমাদের কিছু দায়িত্ব মনে রাখা উচিত –
যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা যাবে না।
গাছপালা ও বন্যপ্রাণীর ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
শব্দদূষণ কমিয়ে প্রকৃতির শান্ত পরিবেশ বজায় রাখতে হবে।
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান প্রকৃতির মাঝে প্রশান্তি খুঁজে পাওয়ার এক অনন্য স্থান। সবুজ বনের ছায়ায়, পাখির কিচিরমিচির শব্দে, নির্মল বাতাসের ছোঁয়ায় একদিন কাটানো মানে এক নতুন শক্তি নিয়ে ফিরে আসা। যদি আপনি প্রকৃতি ভালোবাসেন, তবে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে অবশ্যই একবার ঘুরে আসতে পারেন!
যাতায়াত ও খরচ:
• বাস বা প্রাইভেট গাড়িতে যাওয়া যায় (ভাড়া ১০০-২০০ টাকা)।
• প্রবেশ ফি ৫০ টাকা।
• মোট খরচ ৫০০-১০০০ টাকার মধ্যে।
৫. নুহাশ পল্লী – হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতিধন্য স্থান
বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী লেখক হুমায়ূন আহমেদ শুধু তার লেখা দিয়েই নয়, প্রকৃতি আর সৃষ্টিশীলতার প্রতি তার ভালোবাসার জন্যও আমাদের মাঝে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার সেই ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে নুহাশ পল্লীতে, যা এখন শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত বাগানবাড়ি নয়, বরং বাংলা সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য এক তীর্থস্থান।
নুহাশ পল্লীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
গাজীপুর জেলার পিরুজালী গ্রামে অবস্থিত নুহাশ পল্লী হুমায়ূন আহমেদ গড়ে তুলেছিলেন তার স্বপ্নের জায়গা হিসেবে। প্রায় ৪০ বিঘা জমিজুড়ে বিস্তৃত এই পল্লী শুধুমাত্র তার বিশ্রামের জায়গা ছিল না, এটি ছিল তার সৃষ্টিশীলতার এক উর্বর ক্ষেত্র। এখানেই তিনি লিখেছেন তার অনেক বিখ্যাত উপন্যাস, পরিচালনা করেছেন নাটক ও সিনেমার শুটিং।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বিন্যাস
নুহাশ পল্লী প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে মনোমুগ্ধকর সবুজের সমারোহ। নানা প্রজাতির গাছপালা, বিশাল লেক, ছোট ছোট কাঠের সেতু, এবং পাখির কলতান পরিবেশটিকে আরো মোহনীয় করে তুলেছে।
হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতিচিহ্ন
লেখকের সমাধি – ২০১২ সালে এই কিংবদন্তি লেখক মৃত্যুবরণ করার পর তার ইচ্ছানুযায়ী নুহাশ পল্লীর শান্ত পরিবেশে তাকে সমাহিত করা হয়। তার সমাধির চারপাশে সবুজ গাছপালা, যা এক গভীর প্রশান্তির আবহ তৈরি করে।
বইঘর ও ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা – এখানে সংরক্ষিত রয়েছে হুমায়ূন আহমেদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি এবং তার লেখা বইয়ের সংকলন।
'বৃষ্টি বিলাস' ও অন্যান্য স্থাপনা – নুহাশ পল্লীর অন্যতম আকর্ষণ ‘বৃষ্টি বিলাস’ নামে একটি ছোট বাড়ি, যেখানে তিনি বৃষ্টির মাঝে সময় কাটাতেন। এছাড়াও তার নির্মিত কটেজ, বাংলো, এবং খোলামেলা বসার স্থানগুলো তার জীবনধারার প্রতিচ্ছবি বহন করে।
নুহাশ পল্লীর অন্যান্য আকর্ষণ
ঔষধি ও দুর্লভ গাছের বাগান – এখানে রয়েছে নানা প্রজাতির গাছ, যার মধ্যে কিছু বিরল ও ঔষধিগুণসম্পন্ন গাছও রয়েছে।
প্রাণী ভাস্কর্য – জায়গাটিতে হুমায়ূন আহমেদের তৈরি করা নানান ধরনের ভাস্কর্য ও শিল্পকর্ম রয়েছে, বিশেষ করে কিছু ভৌতিক ও ব্যতিক্রমী মূর্তি যা তার নাটক ও বইয়ের চরিত্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত।
নাটক ও সিনেমার শুটিং স্পট – ‘অয়োময়’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’সহ অনেক জনপ্রিয় নাটক ও চলচ্চিত্রের শুটিং হয়েছে এখানে।
প্রবেশ ও দর্শনার্থীদের নিয়ম
নুহাশ পল্লী সাধারণত বিশেষ দিনগুলোতে (যেমন হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন, মৃত্যুবার্ষিকী বা বিশেষ আয়োজনের সময়) সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে।
প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট ফি দিতে হয়, যা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয়।
জায়গাটির পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য কোনো রকম শব্দদূষণ, ময়লা ফেলা বা গাছপালা নষ্ট করা নিষিদ্ধ।
নুহাশ পল্লী শুধুমাত্র একটি পর্যটনকেন্দ্র নয়, এটি বাংলা সাহিত্যের এক জীবন্ত স্মৃতিসৌধ। প্রকৃতির শান্ত কোলে, হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখা এই স্থান সাহিত্যপ্রেমী, পাঠক এবং দর্শনার্থীদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতার জায়গা। যারা তার লেখার ভক্ত, তাদের জন্য নুহাশ পল্লী শুধু একটি ভ্রমণস্থান নয়, বরং হৃদয়ের এক টুকরো আবেগের জায়গা।
"প্রকৃতির মাঝে হুমায়ূন, স্মৃতির মাঝে নুহাশ পল্লী!"
যাতায়াত ও খরচ:
• ঢাকা থেকে বাসে ২ ঘণ্টার পথ (ভাড়া ১০০-২০০ টাকা)।
• প্রবেশ ফি ২০০ টাকা।
• মোট খরচ ৫০০-১০০০ টাকার মধ্যে।
কম খরচে একদিনের ভ্রমণের জন্য টিপস
১. যাতায়াত ব্যবস্থা ও খরচ কমানোর উপায়
• পাবলিক বাস বা ট্রেন ব্যবহার করলে খরচ কমে যাবে।
• গ্রুপ ট্যুর করলে পরিবহন খরচ ভাগাভাগি করা যাবে।
• নিজস্ব খাবার নিয়ে গেলে বাড়তি খরচ কমবে।
২. খাবার ও অন্যান্য খরচ বাঁচানোর উপায়
• নিজের খাবার সঙ্গে নিলে বাড়তি খরচ কমে যাবে।
• রাস্তার ধারে স্থানীয় দোকান থেকে খেলে কম খরচে ভালো খাওয়া যাবে।
৩. সময় পরিকল্পনা
• সকাল ৭-৮ টার মধ্যে রওনা হয়ে যেতে হবে।
• দুপুরে ভ্রমণের প্রধান আকর্ষণগুলো দেখে নিতে হবে।
• বিকেল ৫-৬টার মধ্যে ফিরতে হবে, যাতে অতিরিক্ত খরচ না হয়।
ঢাকার আশেপাশে একদিনের ট্যুরের জন্য অনেক সুন্দর জায়গা আছে। আপনি যদি ইতিহাস ভালোবাসেন, তবে সোনারগাঁ আপনার জন্য উপযুক্ত। প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকতে চাইলে মধুপুর বন বা ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান বেছে নিতে পারেন। পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে আরামদায়ক সময় কাটাতে চাইলে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক বা নুহাশ পল্লী দারুণ বিকল্প। সঠিক পরিকল্পনা করলে স্বল্প বাজেটে দারুণ এক ভ্রমণ উপভোগ করা সম্ভব!
প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url